রিমন॥ গ্রীন লাইফ হাসপাতালে আমার বাবাকে নিয়ে গিয়েছি একটি টেষ্ট করানোর জন্য। কিন্তু আমি অপেক্ষায় বসেছিলাম আলট্রাসাউন্ড রুমের সামনে দীর্ঘ অপেক্ষার পালা। রোগী সবাই মহিলা। এর আগে কোনদিন এই হাসপাতালে আসিনি, এবারই প্রথম। বেশীরভাগ কর্মচারী হিজাব এবং নেকাব দেওয়া, বেশীর ভাগ রোগীও তাই।
অপেক্ষার বিরক্তিকর প্রহর কাটাতে অন্যান্য রোগিণীদের সাথে কথোপকথন। আমার ঠিক পাশেই একটি অল্প বয়সী মেয়ের কেবল কাজল কালো মায়াবী চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। জানালো ওর বয়স ১৯ বছর ৬ মাস। বছর দেড়েক আগে বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়িতেই থাকে। ব্রেস্ট টিউমারের জন্য এসেছে, প্রতি রাতে গায়ে জ্বর আসে। উৎকণ্ঠিত আমি প্রায় আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, ”এতদিন কি করেছো ”! ডাগর চোখের পাতা দুটো নামিয়ে সজল চোখে মেয়েটি উত্তর করল, ” হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার আর আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিয়েছে গত এক বছর”। মেয়েটির দু চোখ বেয়ে অলক্ষ্যে দুফোঁটা অশ্রুবিন্দুও বুঝি ঝরল! আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো, মেয়েটির জন্য প্রাণ ভরে দোয়া, ” মহান রাব্বুল আলামিন ওকে রক্ষা করুন, ওর প্রতি সদয় হোন”। মেয়েটির সাথে করে এসেছে প্রায় ওরই সম বয়সী আরেকজন। ডাক্তার যদি খারাপ কিছু বলে কি করে সামাল দেবে !
রোগের কাছে এখনো লজ্জা, ভয়, অসহায়ত্ব, পর্দা ! একটি মানুষের জীবনের চেয়েও মুখ ফুটে বলা বেশী সংকোচের !
বর্তমান সময়ে ব্রেস্ট, ওভারী এবং ইউটেরাস ক্যান্সার খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এতে লজ্জা,ভয় বা লুকানোর কিছু নেই। সময়মত চিকিৎসা নিলে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভনা আছে। অনেক মহিলাই সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে এমন কি অনেক সময় নিজের গুরুত্ব কিংবা সৌন্দর্য হারানোর ভয়ে সম্পূর্ণ রোগের ঘটনা চেপে জান, পরিশেষে যখন বেসামাল হযে বেড়িয়ে আসে তখন করার আর কিছু থাকে না, স্বামী-সন্তান, সংসার সব কিছু পিছু ফেলে নিষ্ঠুর নিয়তিই একমাত্র ভবিতব্য।
আমার বন্ধুদের এমনকি দেশবাসির কাছে আমার আবেদন রইলো, আপনার সঙ্গিনীকে অভয় দিন খোলামেলা আলোচনা করুন, অচলায়তন ভেঙ্গে বেড় করে নিয়ে আসুন। আপনার স্ত্রী, বোন, মা, মেয়ে যেই হোক না কেন পর্দার চেয়ে প্রিয় আপন মানুষটির জান বাঁচানো ফরজ । মনের পর্দা সরান আপনার একান্ত প্রিয় ব্যক্তিটিকে ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচান। অসুখ কখনো লজ্জার হতে পারে না, অসুখ কখনো অপরাধ হতে পারে না। মানুষের জীবনের থেকে এই পৃথিবীতে অন্য কোন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়, হতে পারে না কিছুতেই ।