টিআইএন॥ ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যা। কয়েকজন উর্ধধতন পুলিশ কর্মকর্তা গেলেন গণভবনে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানতে চাইলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার ব্যাপারে পুলিশ কী করবে? বেগম জিয়া দুদিন পর দেশে আসছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ৪ টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বললেন, ‘বেগম জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধী দলের নেতা। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে কেন? তাঁকে সুযোগ দিন, আদালতের পরবর্তী তারিখে তিনি আত্মসমর্পন করে কিনা দেখেন।’ বেগম জিয়া চার মামলায় হুলিয়া নিয়ে দেশ ফিরলেন ১৮ অক্টোবর। পরদিন আদালতে গিয়ে জামিন নিলেন। এর কয়েকদিন পরের ঘটনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এবার প্রসঙ্গ বেগম জিয়ার কক্সবাজার সফর। বিএনপি ফেনী, চট্রগ্রাম এবং কক্সবাজার সার্কিট হাউস ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে। সরকার কী করবে? প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী বললেন, বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাই তাঁকে অবশ্যই সার্কিট হাউস ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে। তাঁকে যেন ভিআইপি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয় – তাও নিশ্চিত করলেন। ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনাকে মনে করিয়ে দিলেন, ২০০১-২০০৬ সালের কথা। এ সময়, আওয়ামী লীগ সভাপতিকে কোথাও সার্কিট হাউস ব্যবহার তো দূরের কথা, বিরোধী দলীয় নেত্রীর প্রাপ্য প্রটোকল টুকুও দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী হাসলেন, বললেন, হ্যাঁ, ওরা তো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার টুকুও ওরা জানে না। তাই বলে ওরা যা করেছে আমরা কি তাই করব?
এটাই হলেন শেখ হাসিনা। চরম প্রতিপক্ষকেও তিনি তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন না। তার হত্যা চেষ্টাকারীকেও গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের রীতিতে মূল্যায়ন করেন। শুধু এ দুটি ঘটনা নয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন দুজন জেলে, তখন ভালো খাবার এলেই শেখ হাসিনা কিছুটা পাঠিয়েছেন বেগম জিয়াকে। বিভিন্ন মামলায়, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত দুবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায়।
শেখ হাসিনা জানেন, বেগম জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। শেখ হাসিনা জানেন, বেগম জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া তাঁকে হত্যার নীলনকশা রচনা করে চলেছে একের পর এক-তারপরও তিনি বেগম জিয়ার ছোট ছেলে মৃত্যুর পর সব প্রটোকল ভেঙ্গে বেগম জিয়াকে সান্তনা দিতে গিয়েছিলেন। এটাই তাঁর অনন্যতা। বেগম জিয়া যে এখনো জেলে না থেকে মুক্ত বাতাসে ঘুরছেন, তাও শেখ হাসিনার অবদান। আইনজীবীদের তিনি বলেছেন, ন্যায় বিচার যেন নিশ্চিত হয়। আসামি হিসেবে বেগম জিয়া যেন সব সুযোগ সুবিধা পায়। রাজনীতির মাঠে যাই বলুক না কেন, শেখ হাসিনা সুনীতি এবং রাজনৈতিক সৌহাদ্যের সংস্কৃতি চালু করতে চান। এজন্যই তিনি, তারেক জিয়ার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের রাজনীতিতে আসার সংবাদে খুশি হয়ে বলেন, ‘শিক্ষিতরা রাজনীতিতে এলে রাজনীতির পরিবেশ ভালো হবে।’
শেখ হাসিনা চান না বেগম জিয়া জেলে যাক। দন্ডিত যদি হনও তারপরও হয়তো বেগম জিয়া কারগারে না গিয়ে নিজ গৃহে বা কোনো পরিপাটি সাব জেলে থাকবেন কিংবা জামিন নিয়ে মুক্ত থাকবেন- শেখ হাসিনার মহানুভবতায়। কিন্তু শেখ হাসিনার এই উদারতার বার্তা কি বেগম জিয়া বুঝতে পারেন?