টিআইএন॥ এক ভদ্রলোক এখন দেখি, অনেক বড় বড় কথা বলেন। বেশ জ্ঞানী-গুণী। আমি পার্লামেন্টে সার্কাসের এক গাধার গল্প বলায় তিনি বেশ দুঃখ পেয়েছেন। আমি দেখলাম, অনেক সময় টেলিভিশন টক-শোতে তিনি বলেন, তাদের মতো শিক্ষিত লোকদের নাকি গাধা বলা হয়েছে। আমি তো একটা গল্প বলেছি। এতে কারও যদি আঁতে লাগে, আর সে যদি নিজেকে গাধা মনে করে, আমার কিছু করার নাই। সেই ভদ্রলোকও খুনি হুদা আর পাশাকে নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক দলও করেছিল। মঞ্জু ভাই (পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) ভালো বলতে পারবেন।
কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যে লোক খুনিদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন, তাদের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন, সেই টাকা কিসের টাকা? ইত্তেফাকের টাকা? ইত্তেফাকটা কার? হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অর্থে ওই ইত্তেফাক আওয়ামী লীগের একটা পত্রিকা। যেটা অবশ্য পরে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের আর কোনও অধিকার থাকে না। সেই ইত্তেফাকের অর্জিত সম্পদ দিয়েই ভদ্রলোক বিদেশে ব্যারিস্টারিও পড়ে এসেছেন, সাহেব হয়ে গেছেন। ওই ইত্তেফাকের টাকা দিয়েই তাদের জৌলুস। ইত্তেফাকের টাকা দিয়েই তারা বড়লোক হয়েছেন, অর্থশালী হয়েছেন। এখন কেউ রিকশায় চড়লে হীন চোখে দেখেন। কিন্তু, টাকাটা সোহরাওয়ার্দী সাহেবের। তার ছেলেটা কী অবস্থায় আছে; সে খবরটাও রাখেন না। ইত্তেফাক পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর অবদান রয়েছে; সে কথা ভুলে গিয়েছিলেন। তার মুখে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়। বাংলাদেশের জন্য এটাই হলো দুর্ভাগ্যের।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করেও অনেক কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি উপদেষ্টা হওয়ার জন্য আমাদের কাছে অনেকবার ধর্ণা দিয়েছিলেন। আমরা যখন পার্টি থেকে উপদেষ্টার নাম পাঠাই, তখন তার নামটাও পাঠিয়েছিলাম। উপদেষ্টা হওয়ার পর সবার আগে আমাকেই গ্রেফতার করা হলো। আর, আমার বিরুদ্ধে মামলাটা দেওয়া হলো। আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম, দেশে ফিরে আসবো, তিনি নিজে আমাকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, থাকো বুনডি তুমি আর আইসো না। তিনি বলেন, বরিশাল-ফরিদপুরে ছোট বোনকে বুনডি বলে ডাকে। সঙ্গে একজন মেজর জেনারেল ছিলেন।
ইত্তেফাকের ইতিহাস :
ইত্তেফাক এর প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৫৩ সনের ২৪ ডিসেম্বর হতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও ইয়ার মোহাম্মাদ খান এর হাত ধরে। ইয়ার মোহাম্মাদ খান হলেন এর প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক। তবে তাঁরা দুজনেই সক্রিয় রাজনীতি ও পাকিস্তান বিরোধি আন্দোলনে ব্যাস্ত থাকায়, তাঁরা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞাকে সম্পাদক নিয়োগ করেন। ১৯৫৪ এর সাধারণ নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্টের জয়ে ইত্তেফাক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে এবং আইয়ুব খান হতে ইয়াহিয়া খান পর্যন্ত সকল সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে। ফলে, আইয়ূব খান ১৯৬৬ সনের ১৭ জুন হতে ১১ জুলাই এবং এরপর ১৯৬৬ সনের ১৭ জুলাই হতে ১৯৬৯ সনের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এর প্রচারনা বন্ধ রাখেন। মানিক মিঞাকেও কয়েকবার জেলে যেতে হয়।
তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞা
মানিক মিঞা ১৯৬৯ সনের ১ জুন মারা যান এবং তাঁর দুই ছেলে মইনুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হাতে নেন। পাকিস্তান আর্মি ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ ইত্তেফাকের অফিস পুড়িয়ে ফেলে এবং পুনরায় এর প্রকাশনা (পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে) শুরু হতে ঐ বছরের ২১ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধিনতার পর ১৯৭৫ সনের ১৭ জুন ইত্তেফাকের জাতীয়করণ হয়, নুরুল ইসলাম পাটোয়ারি প্রধান সম্পাদক হন এবং ঢাকার ১ রামকৃষ্ণ মিশনস্থ নিউ নেশন প্রেস হতে প্রকাশিত হতে থাকে।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
মানিক মিঞার ছেলেদেরকে ১৯৭৫ সনের ২৪ অগাস্ট মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য মানিক মিঞার দুই মেয়ে ১২ শতাংশ মালিকানা পান যদিও ২ ছেলেই তা ব্যবস্থাপনা করে আসছিলেন। দুই ভাই দীর্ঘস্থায়ী বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁরা দুজনে পালাক্রমে এই প্রভাবশালী পত্রিকা পরিচালনা করেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে কয়েক দফা বন্ধও হয়েছিল ইত্তেফাক। ২০০৭-২০০৮ সনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থা চলাকালে পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা মইনুল হোসেন। ২০১০ সনের ২ মে বিকেলে ঢাকার শেরাটন হোটেলে দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এ চুক্তি সই হয় এবং ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও দুই মেয়ে (ও তাঁদের সন্তানেরা) মালিকানা গ্রহণ করেন। বিনিময়ে বড় ছেলে মইনুল হোসেন ১০ কোটি টাকা ও ইত্তেফাক ভবনের পুরা মালিকানা পান।