টিআইএন॥ শ্রদ্ধা আর শোকের মধ্য দিয়ে গত রবিবার পালিত হয়েছে পিলখানা হত্যা দিবস। সকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে পিলখানায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর তিনবাহিনী প্রধানসহ নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর উপসামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী ইফতেখারুল আলম ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনেরা কবরে ফুল দেন এব পরে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।
পিলখানায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে গত সোমবার বিকাল পৌনে পাঁচটায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল শওকত ইমামের ছোট বোন মাসুদা সাঈদ শেলী ফুল দিতে এসে বলেন, ‘আমি ভাই হারিয়েছি। এই হারানো কখনও পূরণের না। আমাদের পাবার বা হারাবার আর কিছু নেই। আমাদের যা হওয়ার হয়েছে। কিন্তু যারা আমাদের ও রাষ্ট্রের এত বড় সর্বনাশ করলো, তাদের বিচার দ্রুত করা উচিত। আমরা কেবল ভাইয়ের মর্যাদা চাই এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি চাই।’
বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের স্ত্রী নাজনীন আহমেদের ভাই আহম্মেদ সালেহ উদ্দিন কবরস্থানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দোয়া করা ছাড়া আর কী করতে পারি? এখনো বিচার বাকি রয়েছে। দ্রুত বিচার হোক এটাই আশা করি।’
নিহত মেজর মিজানুর রহমানের মা কহিনূর বেগম প্রতিবছরের মতো এবারো কবরস্থানে এসেছেন বড় ছেলে লে. কর্নেল ফেরদৌসের সঙ্গে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মিজানুরের বড় ছেলে তাহসিন রহমান রামি (১৫)। রামি বর্তমানে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা করছেন। দাদি ও চাচার সঙ্গে রামি বাবার কবর জিয়ারত করেন। মেজর মিজানুর রহমানের মা কহিনূর বেগম ছেলের কবরের পাশে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমাকে বলে, মা তুমি সামিকে দেখ। এরপর আমার বাবা আমাকে আর মা ডাকল না, আর কথা বলল না। সামির বয়স তখন তিন বছর। এখন সামি স্কুলে যায়। কিন্তু মিজান কিছুই দেখতে পেল না।’ এরপর তিনি আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শহীদ মেজর মমিনুল ইসলাম সরকারের বাবা ও বোন বিলাপ করছিলেন। মেয়েদের নিয়ে ছেলের কবর জিয়ারত করতে এসেছেন মফিজুল ইসলাম সরকার। তারাও দ্রুত বিচারের দাবি জানান। নিহত মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের বোন হোসনে আরা পারভীন তার ভাইয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। তিনি কবর জিয়ারত শেষে বলেন, ‘আমার ভাইকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা তার বিচার চাইতে পারি। তবে রায় ও বিচার নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমরা ৯ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। রায় কার্যকর হয় কিনা আমরা জানি না।’