আন্দোলন, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য থেকে ঘরে ফেরার সময় এখনই

Tajul Pictureতাজুল ইসলাম॥ কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে গত কয়েক দিনের স্কুল-কলেজের কোমলমতিদের যে আন্দোলন তাতেও আমার কোন বাহাবা বা পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান ছিল না। তবে ঐ আন্দোলনের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তার কারণে ঐ আন্দোলনের পক্ষালম্বন না করে বিপক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেছি। আমি আমার সম্পাদকীয়তেও এই বিষয়টি বিস্তারিত লিখেছি। আর আজ লিখছি আমার ফেসবুক ষ্ট্যাটাসে।
আন্দোলনের একটা যৌক্তিক কারণ ছিল, বিবেক এবং মানবিকতা ও আবেগের মিশ্রিত ফল। যার কারণে অনেক ক্ষতির কারণ হয়েছে বটে; তারপরও বলব প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজের এবং সরকারের ও দলের প্রতিটি স্তরের সঙ্গে আমিও একমত এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করে নাগরিক জীবনের নগর যন্ত্রণা মেনে নিয়েছিলাম।
শুধু মেনে নিতে পারিনি অতিরঞ্জিত আবেগের ক্ষতিকর দিকগুলি এবং ভাষার গুনগত কুফলগুলিকে। যে মাধুয্য মিশানো মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল, রফিক- জব্বারসহ আরো অনেকে; সেই ভাষারই কিনা এই অধপতনমুলক ব্যবহার প্রদর্শিত এমনকি উ”চারিত হয়েছে; তা মেনে নেয়া যায় না। একে শিক্ষা এবং শিক্ষিতের জৌলুস বলা যায় না বরং অশিক্ষা এবং কুশিক্ষার অন্ধকারা”ছন্ন আলোকবর্তিকা বলা যায়।
আমাদের কোমলমতি মেয়ে ও ছেলেরা এই সব অর্জন করেছে এবং তা আবার বিলিয়ে দেয়ার জন্য এই আন্দোলনের মাধ্যমকে ব্যবহার করেছে দেখে বেঁচে থাকার সকল ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে এখন বাক-স্বাধীনতা হীনতায় ভোগছি। আমার ৫ বছরের মেয়ে এবং ১০ বছরের ছেলে উভয়েই এই আন্দোলনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রী বটে। তাদের চোখে দেখা এবং কানে শুনা এই আন্দোলন ঘৃণার জন্ম দিয়েছে এবং মর্মাহত ও সহাভুতি প্রকাশের আবেগকে ঘৃণায় পর্যবসিত করেছে। এটাই কি আন্দোলনের সাফল্য?
যেখানে সরকার প্রধান এবং প্রশাসন, দল ও সাধারণ জনগণ এই আন্দোলনে সহমত প্রকাশ করেছে সেখানে কেন আন্দোলনের সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার পরও রাস্তায় থেকে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি এমনকি বিভিন্ন কুচক্রি মহলের গোপন দাবি বাস্তবায়নের এজেন্ডা হিসেবে কাজ করার মহড়ায় লিপ্ত? যাতে জীবন ও যৌবন বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম ছাড়া আর কি।
সচেতন অভিভাবক হিসেবে; একজন সামাজিক মুক্তমনের মানুষ ও ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হিসেবে; পাশাপাশি যার কোন শত্রু নেই এই ধরণের স্বীয় কাজে আত্মতৃপ্তী ভোগকারী হিসেবে আরেকজন অভিভাবককে বিনয়ের সঙ্গে বিনীত অনুরোধ করব, যাতে করে আপনার আমার সকলের সন্তানের মঙ্গল চিন্তায় এবং কামনায় ও বাস্তবায়নে বলিষ্ট দায়িত্ব নিতে পারি। সন্তানের ভবিষ্যত গড়ে দেয়ার রোডম্যাপ ও বাস্তবায়ন এমনকি লক্ষ্যে পৌঁছার সিড়িঁতে পৌঁছে দিতে স্ব স্ব ভুমিকা পালন করুন। সরকার বা প্রশাসন এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষই যতেষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় ভুমিকা আপনার এবং আমার। প্রথমে বেড়ে উঠার সিড়ি এবং নিজেকে গঠন করার উর্বর জায়গা হল পরিবার। এই পরিবারের পরেই সমাজ ও পরিবেশ এবং স্কুল-কলেজ; তার পরেই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনার এবং আমার ভুমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই সফলতা এবং জাতীয় গর্ব উদযাপন করা যাবে। নতুবা সবই বিফলে যাবে।
গ্রামে যখন হাল-চাষ শুরু হয় তখন দেখা যায় আগের হাল যেদিকে যায় ঠিক পিছনের হালগুলিও আগেরটার পিছনে পিছনে যায়। তাই আগের হালটির সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য একজন দক্ষ্য রাখাল বা চাষা প্রয়োজন। তেমনি আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য একজন দক্ষ অভিভাবক, পিতা-মাতা এবং শিক্ষক/শিক্ষিকা অথবা সমাজের যোগ্য সম্মানীত একজন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তির পরিচর্যা প্রয়োজন। তাই এই সময়ে ঐ কোমলমতিদের নিজেদের সিদ্ধান্ত এবং ইচ্ছার উপর ছেড়ে না দিয়ে বরং পরিচর্যা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে দিন যাতে লক্ষ্যের শেষতক পৌঁছাতে কোনা বাধাাই বাধা বলে মনে না হয়।
প্রত্যেকের কাছে সন্তান খুবই আদরের। আর সন্তানের অমঙ্গল কোন পিতা-মাতা বা অভিভাবকই কামনা করেন না। তাই ঐ প্রীয় সন্তান, যাদেরকে কলিজার টুকরা হিসেবে প্রকাশ করে থাকেন তাদেরকে রক্ষা করার এখনই সময়। নতুবা বিয়োগান্তক ঘটনার জন্মনিবে এবং দিবে। হলি আর্টিজেনের মত ঘৃনিত ও কলুষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তিও ঘটবে। অবশেষে ফল হবে কলিজার টুকরা বিহীন জীবন চোখের জলে সয়লাভ হওয়া। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে/মিশে আমাদের কলিজার টুকরাগুলিকে সংরক্ষণ করি এবং রাস্তায় নয় পড়ার টেবিলে এবং স্কূল-কলেজে নিয়ে জ্ঞানের বহি:প্রকাশে উৎসাহিত করি।
জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যার প্রকাশ ঘটে তা এ কথিত আন্দোলন ও নৈরাজ্য এমনকি বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে নয়। বরং তা হল উন্নতর কোন প্রযুক্তি অথবা উদ্ভাবনী শক্তি বা জটিল বিষয়ের সহজ সমাধান। আসুন আবারো বলছি সবাই মিলেই আমরা গড়ে তুলব আমাদের সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজমান ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিক চলমান উন্নয়ন পক্রিয়া। আসুন কানে শুনি এবং চোখে দেখি ও শকুনের ছোবল থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করি। পরিবেশ ও রাস্তাঘাটের নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করি। সকল বাহিনী এবং সরকারকে সহযোগীতা করি, যেন তাদের দেয়া ওয়াদার বাস্তবায়নকল্পে স্বা”ছন্দে এগিয়ে যেতে পারে।
সবাই ভালো থাকুন এবং কাজে নেমে পড়ুন সময়ের কাজ সময়েই শেষ করতে হবে। সময় থাকতে হাল ধরতে হবে। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহলেরও দায়িত্বশীল আচনের বহি:প্রকাশ অব্যাহত রাখতে হবে। সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমার পরের তরে; এই বাণীর মর্মার্থ বাস্তবায়নে তৎপর হই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.