প্রশান্তি ডেক্স॥ সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) যে অস্থিরতা, টানা রকম টানাপোড়েন চলছে- এর মূলে আছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী এরশাদ মহাজোট থেকে আলাদা হয়ে পৃথকভাবে অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। আর এই পরিকল্পনায় তাঁকে মদদ দিয়েছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। গত ৬ মাসে ঘন ঘন সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে এরশাদের মধ্যে। ওই সময়ে চার দফা সিঙ্গাপুর গিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান। জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে তারেক জিয়ার বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এরশাদ। এছাড়া এরশাদ একবার ভারতে গিয়েছিলেন। এই বিদেশ সফরগুলোর সঙ্গে এরশাদের সাম্প্রতিক গ্রহণকৃত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের যোগসাজোস আছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, বিভিন্ন দফায় সিঙ্গাপুর গিয়ে প্রতিবারই তারেক জিয়ার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এরশাদ। জাপা চেয়ারম্যান যাঁদের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন, তাঁদের একজন হলেন বাংলাদেশে এক ব্যবসায়ী ও রেডিওর স্টেশনের মালিক এবং তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। তাঁর মাধ্যমেই তারেক জিয়ার সঙ্গে এরশাদের দেন-দরবার হয়। সেখানে এরশাদকে মহাজোট থেকে আলাদা করার জন্য, পৃথক অবস্থান গ্রহণের জন্য মোটা অংকের অর্থের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কারণ এরশাদকে মহাজোট থেকে আলাদা করা গেলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে পড়বে বলে বিএনপি-জামায়াত মনে করে। তারেক জিয়ার ওই টোপে এরশাদ ধরা পড়েছিলেন বলেই সূত্রগুলো নিশ্চিত করছে।
এরশাদের চারটি সিঙ্গাপুর সফরের তিনটিতেই এরশাদের সঙ্গে ছিলেন জাপার তৎকালীন মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। আর তাই সম্প্রতি জাতীয় পার্টিতে মনোয়ন নিয়ে যত অসন্তোষ, গন্ডগোল সবই সাজানো নাটক বলেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করছে। তাদের মতে, পরিকল্পনা ছিল, মনোনয়ন নিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা- যেন জাতীয় পার্টিতে অসন্তোষ দেখা দেয়। আর এর ফলে জাতীয় পার্টি আলাদা অবস্থান নিতে বাধ্য হয় এবং সবাইকে মনোনয়ন দিতে হয়। জাপার পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় এবং এটি সরকারের নজরে আসে। এরপরই জাতীয় পাটির নেতৃত্বে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখন জাতীয় পার্টিতে ক্ষমতার যে ভারসাম্য এসেছে তাতে এরশাদ চাইলেও আর আলাদা অবস্থান নিতে পারবেন না। রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব করার মধ্যে দিয়েই মহাজোটকে বিপদে ফেলার পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।