ক্যানসার চিকিৎসায় চমক দেখাবে নতুন রাসায়নিক সিবিএল-০১৩৭

প্রশান্তি ডেক্স॥ ক্যানসার প্রাণঘাতি এক রোগের নাম। কীভাবে এ মরণব্যাধী থেকে বাঁচা যায় সে উপায় বের করতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মরিয়া। এবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক দাবি করল ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর এক রাসায়নিক আবিষ্কার করেছে তারা। গবেষকরা আবিষ্কৃত রাসায়নিকটির নাম দিয়েছেন ‘সিবিএল০১৩৭’।kancher chekitsha
প্রতিষ্ঠানের দাবি, তাদের তৈরি রাসায়নিকটি প্রচলিত কেমোথেরাপির দ্রবণের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে কার্যকর ফল মিলতে পারে। ক্যানসার কোষগুলোর অতি দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করতে পারে ওই রাসায়নিকটি।
বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। সুখবর হলো ওই গবেষণায় জড়িয়ে রয়েছে এক বাঙালি গবেষকের নাম। শর্মিষ্ঠা দে নামের ওই গবেষকের দাবি, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে দু’বছর গবেষণা করে ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসার কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া গেছে। যারা ফুসফুসের ‘স্মল সেল’ ক্যানসারে ভুগছেন (যেমন ফুসফুস ক্যানসার), নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর।
তাদের গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যানসার রিসাচের জার্নাল’-এ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযয়ী, মরণব্যাধি হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যানসার। বিভিন্ন ক্যানসারের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞানী শর্মিষ্ঠা বলছেন, ফুসফুস এবং অন্য ছোট ক্যানসার আক্রান্ত কোষ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এই ধরনের ক্যানসার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রোগীকে বাঁচানো ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। বিগত প্রায় তিন শতক ধরে একমাত্র কেমোথেরাপিই ছিল এই ক্যানসারের প্রধান ওষুধ। যদিও কেমোথেরাপি ক্যানসারকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারে না।
তার দাবি, কেমোথেরাপির এমন একটি পদ্ধতি তাদের গবেষাগারে উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে, যা অতিশয় কার্যকর।
গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, প্রচলিত কেমোথেরাপি দিয়ে ‘টিউমার ইনিশিয়েটিং’ কোষগুলোকে মারা যায় না। ওই টিউমার ইনিশিয়েটিং কোষগুলো পরে কেমোথেরাপির প্রতিরোধক হড়ে দাঁড়ায়। শর্মিষ্ঠারা এমন একটি রাসায়নিক খুঁজে পেয়েছেন, যা এই স্মল সেল ক্যানসারে টিউমার ইনিশিয়েটিং কোষগুলোকে খুব সহজেই মারতে পারে।
গবেষণায় তারা দেখেছেন, সাধারণত প্ল্যাটিনামনিভর যে কেমোথেরাপিতে সিসপ্ল্যাটিন ব্যবহার হয়, তার সঙ্গে তাদের আবিষ্কৃত সিবিএল০১৩৭ রাসায়নিক প্রয়োগ করলে সেটি অনেক বেশি কার্যকর হয়।
সিবিএল০১৩৭ এবং সিসপ্ল্যাটিন একসঙ্গে নির্দিষ্ট ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করায় তাদের দেহে টিউমারের বৃদ্ধি কমেছে এবং তারা অনেক দিন বেশি দিন বেঁচেছে বলে দাবি করা হয়েছে গবেষণাপত্রে।
‘আমাদের উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতি সাদা ইঁদুরের ওপরে কার্যকর হয়েছে। এই থেরাপি মানবদেহে প্রয়োগ করা যায় কি না-তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেটি সফল হলে এই থেরাপি কার্যকর ওষুধ হিসেবে গণ্য হবে এবং বহু রোগীর প্রাণ বাঁচাবে’-যোগ করেন বাঙালি এই বিজ্ঞানী।
ত্রিপুরার আগরতলায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা শর্মিষ্ঠার। কলকাতায় এসে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে শারীরতত্ত্ব নিয়ে এমএসসি করেন। তারপরে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল থেকে পিএইচডি করে ২০০১ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ওহায়োর ক্লিভল্যান্ডে নতুন করে শুরু করেন গবেষণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.