আনোয়ার হোসেন॥ নওগাঁয় আবারও মিলেছে ভেজাল সার কারখানার সন্ধান। গত মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলা প্রশাসন শিল্প নগরীরর (বিসিক) পেছনে শালুকা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ৪৭০ বস্তা নকল সার ও সার তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর পালিয়ে গেছেন কারখানার মালিক ইমদাদুল হক। তিনি যশোর জেলার বাঘাপাড়া থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের বদর উদ্দিন আহমেদের ছেলে। অভিযানের সময় সদর থানা পুলিশের ওসি আব্দুল হাইসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শালুকা গ্রামের জিল্লুর রহমান নাফি পাখি সংগ্রহশালা গুদামে দীর্ঘদিন থেকে টার্কি মুরগি ও কবুতর পালন করতেন। বেশকিছু দিন ধরে গুদামটি পড়ে ছিল এবং ভাড়া দেয়ার জন্য তিনি নোটিশ দেন। গত একমাস আগে জিল্লুর রহমান তার ভবনটি এক বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছেন ইমদাদুল হক নামের ওই ব্যক্তিকে। এরপর থেকে সেখানে দিনের বিভিন্ন সময় ট্রাক দিয়ে মালামাল নিয়ে আসা-যাওয়া হতো। কয়েকজন নারীকে দিনে ২০০ টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করে নিতেন তিনি। তবে কি মালামাল আসতো তা জানেন না স্থানীয়রা।
এছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হতো না। তবে সেখান থেকে কীটনাশকের গন্ধ বের হতো। এ নিয়ে স্থানীয়রা বেশ কয়েকবার কারখানার মালিককে বলেছেন কারাখানা বন্ধ করার জন্য। তারপরও ইমদাদুল হক তার কারখানাটির কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গুদামের ভেতরে বেশকিছু বস্তা প্যাকেট করা আছে। বস্তার পাশেই মাটি জাতীয় সার তৈরির উপকরণ পড়ে আছে। এছাড়া সার তৈরির সরঞ্জাম ও কীটনাশক স্প্রে মেশিন রাখা ছিল। ডিএপি সার তৈরি করার জন্য এক প্রকার আঠাও ছিল। আঠা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গুটি গুটি তৈরি করে ডিএপি সার করা হতো।
স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন বলেন, শুনেছি সেখানে কীটনাশক ও ফিড তৈরি করা হয়। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। তারা রাতে মালামাল আনা নেয়া করে। তবে সেখানে যে ভেজাল সার ও কীটনাশক তৈরি করা হয় তা স্থানীয়রা জানত না।
গুদামের পাশের বাড়ির গৃহবধূ তারা বেগম ও রোজিনা বলেন, কারখানা থেকে কীটনাশকের প্রচুর গন্ধ বের হতো। এতে করে আমাদের ও বাচ্চাদের মাথা ব্যাথা করত। কারখানার মালিককে বেশ কয়েকবার ডেকে নিষেধ করা হয়েছিল। তিনি কারখানাটি বন্ধ করে দিবেন বলেও জানান। কিন্তু সেখানে যে ভেজাল সার তৈরি হচ্ছে তা জানা নেই।
গুদাম মালিক আলহাজ জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ইমদাদুল হক নামে ওই ব্যক্তি তিন বছরের জন্য গুদামটি ভাড়া নিতে চেয়েছিলেন। তবে আমি এক বছরের জন্য প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা হিসেবে ভাড়া দেয়। তারা বলেছিল মালামাল মজুদ ও সরবরাহ করবে। গত একমাস হলো ভাড়া নিয়েছে। এরপর থেকে গুদামে তারা কী করছে তা আমার জানা নেই।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়। এরপর গুদামের মধ্যে দেখা যায় তারা মাটি দিয়ে দস্তা, বোরন, জীমসাম তৈরির চেষ্টা করছিলেন। কারখানার মালিকের কাছ থেকে কাগজপত্র চাওয়া হয়। তারা ‘পেট্রোলোফ’ নামে একটি কোম্পানির কাগজপত্র দেখিয়েছেন। যা ছিল ঢাকার বনানীর ঠিকানায়। এছাড়া ‘নিউ এগ্রো পাওয়ার’ নামে কিছু পলি প্যাকেট দেখায় যেটার সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনের কোনো মিল ছিল না। তারপর সেই প্যাকেটগুলো জব্দ এবং গুদামটি তালা বন্ধ করা হয়। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, এগুলো ফসলের জন্য কোনো উপকারতো নয়, বরং কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা। মাটির সঙ্গে রং মিশিয়ে তারা সার প্যাকেটজাত করছিল।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাটির সঙ্গে রং মিশিয়ে সার তৈরি করে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে আর কিছু আছে কি-না তা পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলার মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুর বাজারে নকল সার ও কীটনাশক কারখানার সন্ধান এবং ৩ সেপ্টেম্বর পরানপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পরানপুরে নকল কীটনাশকসহ প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ।