হজ চিকিৎসক সহায়ক দলে পুলিশ শিক্ষক প্রশাসনিক কর্তারাও

প্রশান্তি ডেক্স॥ এবার বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে চিকিৎসা সেবা প্রদানে গঠিত চিকিৎসক দলকে সহায়তা দিতে ১১৮ সদস্যের ‘হজ চিকিৎসক সহায়ক দল’ গঠন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।hoj jatre
৪ জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মনোনয়নপ্রাপ্তরা মোট ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে আগামী ৯ জুলাই থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় দায়িত্ব পালন করবেন।
হজ চিকিৎসক দলের সহায়তাকারীদের কর্মপরিধিতে বলা হয়, মনোনয়নপ্রাপ্ত সহায়তাকারীরা মেডিকেল ক্লিনিকে রোগীদের সৃষ্ট ময়লা, আবর্জনা পরিষ্কার, ক্লিনিক পরিচ্ছন্ন রাখা, রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ গ্রহণে সহযোগিতা করবেন।
এতে আরও বলা হয়, যেসব রোগী শয্যায় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন, তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সহায়তাকারীরা বাংলাদেশের হাসপাতালে যেভাবে দায়িত্ব পালন করেন, ঠিক সেভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি ৫৪ নার্সের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এরপর নতুন ৫৪ জন নার্সের মনোনয়ন দেয়া হয়। এরপর থেকে হজ কার্যক্রমে বিভিন্ন দলে সঠিক মনোনয়ন নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা, সমালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
হজ সহায়তাকারী দলের মনোনয়ন নিয়েও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সার্বিক হজ কার্য়ক্রমের সঙ্গে জড়িত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, হজ চিকিৎসক দলের সহায়তাকারী হিসেবে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তারা কি আদৌ রোগীদের ময়লা, আবর্জনা পরিষ্কার, ক্লিনিক ধোয়া-মোছা কিংবা রোগীর শয্যাপাশে হাসপাতালে যেভাবে সেবা দেওয়ার কথা, সেভাবে সেবা দেবেন। তাদের কি হাসপাতালে কাজ করার অতীত ন্যূনতম অভিজ্ঞতা আছে?
তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হজ চিকিৎসক সহায়ক দলের সদস্য হিসেবে ১১৮ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র দুই জনের সরাসরি হাসপাতালে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই দুজন হলেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ওয়ার্ডবয় মিজানুর রহমান এবং রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় মো.জসিমউদ্দিন। এ ছাড়া আশকোনা হজ অফিসের মো. মোস্তফা নামে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন।
এ তালিকায় মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে আশকোনা হজ অফিস ঢাকার সহকারী হজ অফিসার, ইসলামী ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা, সহকারী পরিচালক, হিসাবরক্ষক, ফিল্ড অফিসার, ফিল্ড সুপারভাইজার, খাদেম, মুয়াজ্জিন, জাতীয় সংসদের সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর, সহকারী সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর, রাজধানীর ধানমন্ডি গভর্মেন্ট বয়েজ হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক, দুদকের কমিশনারের গানম্যান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ ও এসবির এএসআই, কনস্টেবল রয়েছেন। এ ছাড়া অধিকাংশই অফিস সহায়ক ও গাড়িচালক।
তালিকাভুক্ত হজ চিকিৎসক সহায়তা দলের সদস্য হিসেবে তারা কতটুকু কাজ করবেন, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
হজ চিকিৎসক সহায়ক দলের সদস্য মনোনয়ন নিয়েও গোপনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এই দলের সদস্য হিসেবে নাম লেখাতে পারলে একেকজন সদস্য কয়েক লাখ টাকা বেতনভাতা পান। এ কারণে, এ মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অবৈধ লেনদেন চলে!
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তার কথা ভেবে নয়, প্রভাবশালীদের সুপারিশেই এ তালিকা প্রণীত হয়। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও হাজিরা সেবা পান না।
এ ব্যাপারে জানতে আজ (শুক্রবার) ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগযোগ করা হলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ধর্ম সচিবের মোবাইল ফোনে রিং হলে তিনি কলটি রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.