প্রশান্তি ডেক্স॥ করোনা নিয়ে আতঙ্ক যখন তুঙ্গে, তখনই দেশে ভাইরাল হয়ে উঠলো এসিল্যান্ড (উপজেলা সহকারী কমিশনার-ভূমি)সাইয়েমা হাসানে একটি ছবি , ইতিমধ্যে যদিও সেই ছবির জেরে প্রত্যহার করা হয়েছে তাকে, ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছিল তিন বৃদ্ধকে মাস্ক না পড়ার অপরাধে কানে ধরিয়েছেন তিনি, যদিও তার পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আছে। তবে বিপক্ষের যুক্তির পাল্লাটা ভারী বিধায় তড়ি ঘড়ি করে ব্যবস্হা নিতে অনেকটা বাধ্য হয় প্রশাসন। এবার সেই সাইয়েমা হাসানের পক্ষ নিয়ে মুখ খুললেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। গত (৩০ মার্চ) র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হল,-না আমার জুনিয়র সহকর্মী কোন অন্যায় করেনি। সত্যি বলছি। সত্য জানুন। ঘটনার পিছনের ঘটনা জানুন। আমি প্রথমেই চলমান করোনার প্রাদুর্ভাব সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের যেসব সিনিয়র এবং জুনিয়র সহকর্মী বিশেষ করে চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা কর্মী, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, সেনাবাহিনী ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দসহ অন্যান্য সংস্থা এবং ব্যক্তিবর্গ যাঁরা নিজের ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জীবনকে বিপন্ন করে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দায়িত্ব পালন করছেন দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্য সেসব অকুতোভয় মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ কর্মযজ্ঞের মধ্যে একটি ঘটনা অনেকেরই দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে আর তা হলো যশোরের মণিরামপুরের সহকারী কমিশনার(ভূমি) জনাব সাইয়েমা হাসানের একটি কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে। আর তা হলো দ’জন খেটে খাওয়া বয়ষ্ক মানুষ মাস্ক না পরে বাইরে বের হওয়ার কারণে কানে ধরার ছবি , যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে সাইয়েমা নিজেই তার মোবাইল দিয়ে ছবি তুলছেন। অন্য একজন ব্যক্তি এ দৃশ্যের ছবিটি ধারণ করেছেন এবং পরবর্তীতে এ ছবিটিই সে তার সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছেন। ঘটনাটি দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয় এবং একপর্যায়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে প্রত্যাহার করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। যদি সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা দুজনকে কানে ধরে মাফ চাইতে বলেন তবে তিনি কাজটি বেআইনী এবং অন্যায় করেছেন। কিন্তু আলোচ্য ঘটনার সত্যি বিষয়টা না জেনে আমরা বরং আসল এবং ভয়ংকর অপরাধীদের আড়াল করে দিয়েছি এবং একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক নারী কর্মকর্তার অপূরণীয় ক্ষতি করেছি। আসল ঘটনা হলো স্থানীয় কয়েকজন তথাকথিত শিক্ষিত দালাল বেশ কিছু নামজারি/খারিজ করে দেওয়ার জন্য জোর তদবির করেন , কিন্তু সেগুলো বিধিসম্মত নয় বিধায় তা তিনি অনুমোদন করেননি। আর সেখান থেকেই তার পিছনে লাগা। ঘটনার দিন সাইয়েমা বাজার মনিটরিং এবং করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত নিশ্চিত করতে অভিযানে বের হলে বয়ষ্ক দুজন ব্যক্তি মাস্ক ছাড়া কেন বের হয়েছেন জিজ্ঞাসা করতেই তারা নিজ থেকেই কানে ধরে ফেলেন। আর পিছনে থাকা সে দালাল নামক সুবিধাবাদী সাংঘাতিক অমানুষটি একটি ছবি তুলে তার সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল করে। শুধু তাই না এ চক্রটি উপজেলার সরকারি ওয়েবসাইটি হ্যাকার দিয়ে হ্যাক করে হোম পেজে সেটি পোষ্ট করে। কত ভয়ংকর হতে পারে একটি চক্র ! আসুন সাইয়েমার কাছ থেকেই শুনি ঘটনাটি। গত শুক্রবার বিকেলে বাজার মনিটরিং ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য অভিযানে বের হই। এসময় চেষ্টা করি বাজারে মানুষজনের জমায়েত দূর করার এবং তাদের বিশেষ কাজ ছাড়া বাজারে ভিড় করতে নিষেধ করি। যারা মাস্ক পড়েনি তাদের জিজ্ঞেস করছিলাম মাস্ক কেন পড়েনি? এই সময়ে উক্ত ছবির আলোচিত ব্যক্তিরাও ওখানে ছিল। সে মাস্ক কেন পরেনি জিজ্ঞাসা করতেই তারা নিজেরাই ভয়ে কান ধরেছে, কাল থেকে মাস্ক ছাড়া বের হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই সময় আমি ছবি তুলতে তুলতে বললাম যে আমি গতকালও এখানে এসে অনেককে বলেছি, কিন্তু আজও এরকম দেখছি। এই যে আপনাদের আজ ছবি তুলে রাখছি, আবার দেখলে কিন্তু শাস্তি দেব।”কিন্তু ইতোমধ্যে তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সহকর্মীরাও ঘটনার বিহবলতায় সত্য ঘটনাটা তুলে ধরতে পারেননি এমনকি সাইয়েমাকেও তুলে ধরার সুযোগ তৈরে করে দিতে পারেননি। আর আমাদের মতো হুজুগে বাঙ্গালিরা তাকে নিয়ে নানাবিধ মন্তব্য করেছি। অথচ তার দুই দিন আগে থেকে যে লাঠি পেটা খাচ্ছে ঐটা নাকি সঠিক ছিল। কিছু বুদ্ধিজীবী মার্কা লোক তো কলাম লিখে ফেললেন। সুপ্রিম কোটের এক ফেসবুকার ব্যারিষ্টার মহোদয় বললেন তিনি সাইয়েমার বিরোদ্ধে এ মামলা করবেন। আমি এবার দেখতে চাই যারা সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করল এবং দায়িত্বশীল একজন নারী কর্মকর্তার অপূরণীয় ক্ষতি করলো তার জন্য উনি কি আইনি পদক্ষেপ নেন।যে মেয়েটি শুক্রবার দিন নিজের এবং নিজের পরিবারের কথা না ভেবে মানুষের কথা ভেবে কাজ করতে গেল তাকে আমরা কি প্রতিদান দিলাম? আমি অনেকটা অবাক হয়েছি গণমাধ্যমে যে রিপোর্টগুলো প্রকাশিত হয়েছে কোনটিতেই সাইয়েমার বক্তব্য নেয়া হয়নি। আমি আশা করব মূল ধারার গণমাধ্যম বিষয়টি ভলোভাবে জেনে আরেকটি পজিটিভ রিপোর্ট করবে। সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করার অপরাধে ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে। আর যে কুলাঙ্গার অমানুষটি সাইয়েমাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধন্যবাদ ডি বি , ডি এম পি। তাই আসুন সত্য জানি । সত্য না জেনে কোন কিছু শেয়ার না করি।