প্রশান্তি ডেক্স॥ কবে বের হবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের টিকা বা ওষুধ? যাতে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যায় রাশ টানা সম্ভব হবে। কবেই বা গোটা বিশ্বে নির্মূল করা যাবে এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসকে? বিজ্ঞানী, ভাইরোলজিস্ট ও চিকিৎসকদের একাংশ এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত একেবারেই রয়েছেন অন্ধকারে। কারণ, তাদের হাতে এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাস সম্পর্কে তেমন পর্যাপ্ত তথ্যাদি নেই, যার ভিত্তিতে তারা এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার দিনক্ষণ জানাতে পারেন। বিজ্ঞানী ও ভাইরোলজিস্টদের একাংশ বলছেন, সমস্যা সামলে উঠতে আরও ৯/১০ মাস লাগতে পারে। আবার তা গড়িয়ে যেতে পারে এক থেকে দের বছরেও। কারণ, কোনও ভাইরাসকে বুঝে উঠে কোনও সফল ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার করতে ও বাজারে আনতে যতটা সময় লাগে, করোনা এখনও আমাদের সেই সময় বা সুযোগ কোনওটাই দেয়নি। যদি ধরে নেওয়া যায় ডিসেম্বরের শেষাশেষি এসেছে এই নতুন ভয়ঙ্কর ভাইরাস, তাহলে তাকে চেনা-বোঝার জন্য মাত্র তিন মাস সময় মিলেছে। যা কোনও ভাইরাসকেই বুঝে উঠার পক্ষে পর্যাপ্ত নয়। করোনার ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরও বেশি। কারণ, এই ভাইরাস খুব অল্প সময়ের মধ্যে খুব দ্রুত নিজেদের জিনসজ্জা ও আচার, আচরণ ইতিমধ্যেই বহু বার বদলে ফেলেছে। ফলে, তাদের বুঝে ওঠার কাজটা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে। ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলছেন, এ সঙ্কটের জন্ম হওয়ার পর দেখা গিয়েছে, যদি ১০০ জন রোগীর ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গগুলো পাওয়া গিয়ে থাকে, তাহলে বাড়িতে আরও অন্তত ১২০/১৩০ জন এমন মানুষ আছেন, যাদের মধ্যে জীবাণু থাকা সত্ত্বেও রোগের উপসর্গ প্রকাশ পাবে না। এর মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক পরবর্তী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কোভিড ১৯’র রোগী হয়ে পড়বেন। এই দ্বিতীয় দফার রোগী এবং যারা এখনও উপসর্গহীন হয়ে আছেন, তারা সবাই মিলে পরবর্তী সময়ে সমাজে আরও বহু মানুষের মধ্যে জীবাণু ছড়াতে সাহায্য় করবেন। শুধু তাই নয়, কোনও রোগীর দেহে থাকা করোনাভাইরাসের এই ইনকিউবেশন পর্ব ঠিক কত দিনের হবে, সেটাও নিখুঁতভাবে বলা যায় না। সেটা এক রোগী থেকে অন্য রোগীকে বদলে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই রোগী কোন দেশে কী সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থায় রয়েছেন, সেই দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব কতটা, গড়ে তাপমাত্রা কতটা, কেমন সেই দেশের জলবায়ু, তার উপর নিভর করেও বদলে যেতে পারে বিভিন্ন রোগীর দেহে থাকা করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশনের মেয়াদ। কারও ক্ষেত্রে সেই মেয়াদ ২ থেকে ৪ দিন হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে হতে পারে ৭ বা ১৫ দিন। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে তা এক মাসও হতে পারে। তার মানে, কারও কারও ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গগুলি এক মাস পরেও দেখা যেতে পারে। কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসক সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনে করেন, করোনা সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার দিনক্ষণের পূর্বাভাস দেওয়াটা এখন মুর্খামি হবে। টিকা, নতুন ওষুধ বা চালু আন্টিভাইরাল ড্রাগগুলো দিয়ে ‘এটা না হলে ওটা’ পদ্ধতিতে এখন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কিন্তু সেগুলোর কোনওটাই করোনা আক্রান্তকে পুরোপরি সারিয়ে তুলতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। কেন? চীনে এমন বহু রোগী মিলেছে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠে যারা দ্বিতীয় বার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। আর সেই সংখ্যাটা খুব কম নয়। অমিতাভ জানাচ্ছেন, ওই ওষুধগুলো বানানো হয়েছে এক-একটি ভাইরাসের জৈবিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে আঘাত করার জন্য। সেই কৌশল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও যে পুরোপুরি কাজ করবে কি না, তা জানার জন্য আমাদের যতটা সময়ের প্রয়োজন, কোভিড- ১৯ এখনও আমাদের তা দেয়নি। তবে অমিতাভ ও সুশ্রুত দু’জনেই মনে করেন, সভ্যতা করোনার আচমকা আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েলেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না। মানুষের স্বাভাবিক অভিযোজন ক্ষমতার জন্যই সেটা সম্ভব হবে। তবে সেটা কত দিনে তার পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানী, ভাইরোলজিস্ট ও চিকিৎসকদের একাংশ।