লকডাউন হালচাল

সারাদেশ এখন লকডাউন এর আওতায়। তবে শহরে জীবনে লক ডাউন শব্দটি পরিচিত এবং পালনের ক্ষেত্রে ৮৫%সফল। কিন্তু গ্রামের বা মফস্বলের বেলার এই লকডাউন ৪০%ভাগ সফল। গ্রামের মানুষ এই মহামারি আকারে ছড়ানো গুপ্তঘাতক করোনাকে তোয়াক্কা না করে যার যার কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছেন। কৃষক তার কৃষিকাজে ব্যস্ত, শ্রমিক তার দৈনিক কাজে ব্যস্ত, রিক্সা ও ভ্যান চালক তার নিত্যদিনের কাজে ব্যাস্ত, অটো ও সিএনজি চালক তার দৈনন্দিক কাজে ব্যস্ত, দোকানী, খামারীসহ সকল মানুষ কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। সামাজিক দুরত্ব বলতে যা বোঝায় তার ধারে কাছেও নেই। তবে পাবলিক পরিবহন বন্ধ হওয়ায় সিএনজি ও রিক্সার বা অটোর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে পাশাপাশি কিছু অসাধু মানুষের আয়ের উৎসও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই মহামারির কবল থেকে গ্রাম গঞ্জের মানুষগুলোকে রক্ষার বিকল্প নেই, পাশাপাশি তাদের সচেতনতার যে ঘাটতি রয়েছে তা নিরসন কল্পে বা দূরীভূত করার লক্ষ্যে এখনই কাজ করা দরকার। নতুবা সরকারের সকল সফল উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা ব্যর্থতাই পর্যবসিত হবে।
গ্রামের তুলনায় শহরে যেরকম সরকারী কর্মতৎপরতা রয়েছে তা গ্রামে পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। শহরের মানুষ যারা এখনও নিরাপদ সামাজিক দুরত্ব পালনে অক্ষম বা পালন করছেন না তাদের জন্য আরেকটু কঠোর ভূমিকা পালন করা জরুরী। আমরা যদি শহর এবং গ্রামকে এক কাতারে নিয়ে আসতে পারি তাহলে করোনা বিতারণ করা সম্ভব হবে। নতুবা গুপ্তঘাতক করোনার ছড়াছড়ি অব্যাহত থাকবে। যে বা যাহারা এখন করোনার বাহক তাদেরকে চিহ্নিত করা ফরজে আইনে পরিণত হয়েছে। নতুবা করোনাকে থামানো কোনক্রমেই সম্ভব হবে না। তবে বাহক বা তার আশেপাশের লোকজন ভবিষ্যতের কথা ভেবে সরকারের সঙ্গে নিবির যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। নতুব নিজেও মরবে অন্যকেও মারবে। এই অবস্থাকে বেশিদিন চলতে দেয়া বা দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে ধরে নেয়া ঠিক হবে না।
আমাদের দেশের সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে সারাদেশের হালচাল জেনে এবং নিজেও দেশের বর্তমান হালচাল প্রত্যক্ষ করে আজকের এই লিখাটুকু তুলে ধরলাম। গ্রামে ও শহরে দুই জীবনের মধ্যে যে, ফারাক রয়েছে তা অন্তত এই করোনার ক্ষেত্রে দূর করা জরুরী। যারা মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়েছেন আর যারা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তাদের সবার প্রতি আমার বিন¤্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এবং কষ্টের ভাগ বহন করিবার আকাঙ্খা পোষন করি। আমি কিছু করতে না পাড়লেও অন্তত দোয়া – মোনাজাত করে আল্লাহর শান্তি ও স্থিতিশীলতা কামনা করতে পারি। করোনাকে ধমক দিয়ে খোদায়ী ক্ষমতা প্রকাশ করে বিশ্বকে শান্ত করার কাজটুকু চালিয়ে যেতে পারি। তাই সকলের জন্য আমার মোনাজাত এবং ফরিয়াদ, ফিরে আসুন আল্লাহর সান্নিধ্যে এবং তৌবা করে ক্ষমা গ্রহন করুন। আল্লাহর সান্নিধ্যে বসবাসকারীর কোন ভয় নেই, করোনা কোনক্রমেরই স্পর্শ করতে পারে না খোদার সহচর্যকারীকে।
সরকারের নেয়া নতুন নতুন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে এর বিরোধীতা না করে বরং সহযোগীতা করুন এবং নিজ নিজ জীবনে পালন বা চর্চা করুন। সরকার আপনার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহন করেছে সেই ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে খোদায়ী জীবনের স্বাদ অন্যদের আস্বাদনের জন্য উন্মুক্ত করুন। আপনার মাধ্যমেই খোদা তায়ালা কিছু বলতে চায় এবং কিছু করতে চাই; তাই আপনি খোদার অভিপ্রায় অনুধাবন করুন এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে খোদার নিকট সমর্পন করুন; যাতে খোদা আপনাকে ব্যবহার করেই পৃথিবীকে আসমানী বালা, জমীনী বালা-মুছিবত থেকে রক্ষা করতে পারেন। যুগে যুগে খোদা তায়ালা এইভাবেই মানুষকে এবং পৃথিবীকে রক্ষা করেছেন। বিশ্বাস করুন আল্লাহ আপনাকে এবং আমাকে ভালবাসে এবং তিনি কোন সৃষ্টিকেই কষ্টে দেখতে চান না। আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনি। আর সেই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে খোদার সহায়তা কামনা করি এবং মুক্তি পাই। তাই খোদাবিহীন জীবন থেকে ফিরে এসে নিশ্চিত জীবনের স্বাদ গ্রহন করুন।
মনে সাহস রাখুন এবং দুনিয়াবী নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা মেনে চলুন আর খোদার অভিপ্রায় বুঝে পথ চলুন। এই কঠিন সময়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখলেও মানুষ (সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে) মানুষের পাশে এমনকি সৃষ্টির পাশে দাঁড়াই। করোনায় যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, আর্মী, র‌্যাব, বিডিআর এবং সিভিল প্রশাসন এমনকি সরকারের নিতি নির্ধারকগণ সকলকে জানাই আমার শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং অভিনন্দন। সাধারণ জনগণ যারা নিয়ম -শৃঙ্খলা ও আদেশ মেনে চলছেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই আর যারা এখনও নিয়ম-শৃঙ্খলা এবং করোনার অনুশাসন মানছেন না তাদের প্রতি বিনিত অনুরোধ নিজের প্রয়োজনে, পরিবারের প্রয়োজনে সর্বোপরি দেশের প্রয়োজনে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলুন। আগামীর বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে ভূমিকা রাখুন। করোনাকে পরাজিত করুন এবং বিশ্ব মানবতাকে জয়ী করুন। ঐক্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করুন। এই সময়ে ঘরে থাকুন এবং ধৈয্যসহকারে সাহসের সঙ্গে পদক্ষেপ নিন।
পরীক্ষার পরিমান যতবেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও তত বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফেরার এমনকি মৃত্যুর হারও সমানতালে এগুচ্ছে। তাই আশার কথা হচ্ছে যে, আমরা সাহসী জাতি এবং জন্মের পর থেকেই করোনার চেয়েও আরো শক্তিশালী ভয়ঙ্কর অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে সংগ্রাম করে স্ব স্ব অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। তাই হতাশ নয় বরং সাহস নিয়ে অদৃশ্য করোনাকে মোকাবেলায় ঐক্যের মেলবন্ধনে এগিয়ে যাব এবং বাংলাদেশকে করোনা মুক্ত করব। এই করোনা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহতার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে পিছনে তাকাতে সাহায্য করে। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সেই থমথমে ভাব উপলব্দির একটি উপযুক্ত সময় এনে দিয়েছে। মাঝে মাঝে মানুষের কৌতুহল এবং রাস্তায় বেরিয়ে পড়া এমনকি পুলিশ ও আর্মী দ্বারা পুনরায় ঘরে ফিরে যেতে বাদ্য করা যেন সেই সময়েরই একটি ফ্লাশব্যাক মাত্র। তবে করোনা মুক্ত হলে দেখা যাবে ঘরবন্দি বাঙ্গালীর বাধভাঙ্গা আনন্দের স্ফুলিঙ্গ। তবে সেই দিন সহসাই ফিরে আসুক যেন বাঙ্গালীর জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে এবং ঘরবন্দি ও লুকানো মানুষগুলি জনসম্মুখে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করার সুযোগ ও সময় পায়। এই কামনাই প্রতিনিয়ন…. চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.