প্রশান্তি ডেক্স ॥ পার্বত্য চট্টগ্রামের আনারসের রাজধানীখ্যাত রাঙ্গামাটির নানিয়াচর উপজেলায় এবারও সর্বোচ্চ আনারস চাষ হয়েছে। চাষীরা বলছেন, ব্যাপক ফলন হলেও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হবে তাদের ক্ষেতের ফসল। দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় প্রতি বছর লাখ টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে। এদিকে জেলার হাট-বাজারগুলোতে আনারসের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত। জেলার নানিয়ারচরসহ পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা বোঝাই করে শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে আনারস নিয়ে আসছেন বাগান চাষীরা। তবে নিরানন্দ তাদের মুখগুলো। রাঙ্গামাটি জেলা সদরের কয়েকটি পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি আনারস বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকায়। শহরের বনরূপা বাজারের সমতাঘাটে পাইকারি আনারস ব্যবসায়ী বশির মিয়া বলেন, আমি এখান থেকে আনারস কিনছি চট্টগ্রামে অক্সিজেন নিয়ে যাবো। প্রতিটি আনারস আমার ৭-৮ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিতে গাড়ি ভাড়াসহ আমার প্রতিটি আনারসের দাম পড়বে ১২-১৫ টাকা। এরমধ্যে কিছু পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, গাড়ি প্রতি কোনো সময় দুই থেকে চার হাজার টাকা লাভ হয় আবার কোনো গাড়িতে ৭-৮ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। সরেজমিনে, বাজারগুলোতে আনারসসহ মৌসুমি ফলমূলে ভরপুর থাকলেও বাজারগুলো ক্রেতা শূন্য। করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ এখন ঘরবন্দি। বিক্রিবাট্টা নেই বললেই চলে। বেশ কয়েকজন আনারস চাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানিয়ারচরসহ জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আনারসের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। উৎপাদিত আনারস বর্তমানে জেলা সদর, রাজধানী ঢাকা, শরীতপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে রাঙ্গামাটির আনারস যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। তারা আরও জানান, এবছর আনারসের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আনারসের চাহিদা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকটাই কমে গেছে। তবে বাগানে আনারস পেঁকে যাওয়ায় এবং পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কম দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এবছর বাগানের খরচ পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। রাঙ্গামাটি কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কান্তি চাকমা বলেন, আনারসের উৎপাদন হয় সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। কিন্তু বর্তমানে যে আগাম আনারসের উৎপাদন হচ্ছে, সেগুলো বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে হরমোন জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে করে। এবছর দুই হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর চাষ বেশি এবং ফলন ভালো হয়েছে। তবে চাষীরা দাম পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণের ব্যবস্থাপনায় রাঙ্গামাটিতে কৃষকদের জন্য ৪ হাজার বিঘা জমিতে আউশ বীজ ধানের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো আনারস চাষী আউশ ধানের চাষ করতে চায় তাকেও প্রণোদনা আওয়তায় আনা হবে।