রাষ্ট্রকে ‘গণমুখী’ করতে সংবিধান পর্যালোচনার দাবি ইনুর

প্রশান্তি ডেক্স ॥ স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংবিধান পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল তাহেরের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত মঙ্গলবার (২১ জুলাই) এক অনুষ্ঠানে ইনু এ দাবি করেন বলে জাসদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইনু বলেন, আজ সময় এসেছে সংবিধানও পর্যালোচনা করার। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা-সর্বজনীন শিক্ষা-সর্বজনীন খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালুর বিকল্প নেই। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও পুঁজিবাদ ‘মানুষকে অবহেলা আর সমাজে বৈষম্য’ ছাড়া কিছুই দিতে পারে না মন্তব্য করে জাসদ সভাপতি বলেন, করোনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পুঁজিবাদ-মুক্তবাজার অর্থনীতি-গণবিরোধী রাষ্ট্র ব্যবস্থার হাতে জনগণের ভাগ্য ছেড়ে দেওয়া যায় না। সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনুর ভাষায়, মুক্তবাজার অর্থনীতি হল ‘দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা উৎপাদনের’ কারখানা। জাসদ তাই গণবিরোধী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন করা, দুর্নীতি-বৈষম্যের অবসান করার লক্ষ্যে সুশাসন-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম করছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে গণমুখী ও মানবিক করার সংগ্রাম করছে। তাহেরের মৃত্যুবার্ষিকীতে অন্যবছর বিভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও এবার করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে দিনটি পালন করেছে জাসদ। হাসানুল হক ইনু বলেন, কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে ৪৪ বছর আগে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় প্রহসনমূলক বিচারে ফাঁসি দিয়ে ‘ঠান্ডা মাথায় খুন’ করেছিলেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। কর্নেল তাহের যেমন মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজী রেখে লড়াই করেছেন, ঠিক তেমনই ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাতির সঙ্কটকালে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণবিরোধী রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের বিপ্লবী প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। জাসদ আজও সেই লক্ষ্যেই রাজনীতি করছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্নেল তাহেরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ইনুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন জাসদের সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার, আফরোজা হক রীনা, নরুল আখতার, সফি উদ্দিন মোল্লা, শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, রোকনুজ্জামান রোকন, মো. মোহসীন, নইমুল আহসান জুয়েল, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কাজী সালমা সুলতানা, সদস্য এ বি এম জাকিরুল হক টিটন, সহ-দফতর সম্পাদক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ সুমন প্রমুখ। জাসদ স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ মাল্যদানের পর পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় নারী জোটের আহ্বায়ক আফরোজা হক রীনা; জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার খোরশেদ; জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন ও সহ-সভাপতি কাজী সালমা সুলতানা; জাতীয় কৃষক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান ফসি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আহসান হাবীব শামীম, সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হক ননী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল রাজ বংশী প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলে। এরই এক পর্যায়ে ওই বছরের ৭ নভেম্বর সেনানিবাসে আটক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সিপাহীদের সহায়তায় মুক্ত করেন জাসদের সামরিক শাখা গণবাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের। ওই অভ্যুত্থানের ১৫ দিনের মাথায় ২২ নভেম্বর তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দেশোদ্রোহের অভিযোগ এনে তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই রায়ের পর ২১ জুলাই ভোরে যুদ্ধাহত সেক্টর কমান্ডার তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সাড়ে তিন দশক পর সামরিক আদালতের ওই বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করে ২০১১ সালের ২২ মার্চ রায় দেয় হাই কোর্ট। তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি কথিত সামরিক আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করারও নির্দেশ দেওয়া হয় সেই রায়ে। রায়ে বলা হয়, তখনকার সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার তাহেরকে বিচারের নামে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল। জিয়া জীবিত না থাকায় তার বিচার সম্ভব নয়। তারপরও এ হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে তাকে খুঁজে বের করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা উচিত বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.