কামাল আব্বাকে আব্বা বলে ডাকারই সুযোগ পায়নি…প্রধানমন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এই আলোচনা সভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্বা তো বেশিরভাগই জেলে থাকতেন। কামাল জন্ম হওয়ার পর থেকে আব্বা বেশিরভাগই জেলখানায়। কামাল তো আব্বাকে আব্বা বলে ডাকারই সুযোগ পায়নি। আমরা একসঙ্গে যখন খেলতাম, আমি আব্বা বলে ডাকতাম, ও আমাকে জিজ্ঞেস করতো- হাসু আপা, আমি তোমার আব্বাকে একটু আব্বা বলে ডাকি।

তিনি বলেন, দেশের জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য বিশেষ করে বাঙালি জাতির জন্য আমার বাবা যেমন করে সারাজীবন উৎসর্গ করে গেছেন, আমরা ভাইবোনও পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সবাই বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়, আমাদের সেই সুযোগ হয়নি। কিন্তু মা আমাদের সবসময় লেখাপড়ায় সবদিকে নজর দিতেন। ছোট বেলা থেকেই কামাল শুধু খেলার মধ্যে তা না, সাংসারিক কাজেও আমার মাকে সবরকম সহযোগিতা করতেন। ওই ছোট্ট বয়স থেকেই যে খুব দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতো।

তিনি আরো বলেন, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন? একটা মৃত্যু হলে তার বিচার দাবি করেন আমার কাছে। আর আমি কিন্তু বিচার পাইনি। আমরা বিদেশে ছিলাম। আমরা দেশে ফিরতে পারিনি। আমাদের দেশে ফিরতে বাধা দিয়েছে। এরপর আমি যখন ফিরলাম, আমি মামলা করতে পারিনি। কারণ মামলা করার কোনো অধিকার আমার ছিল না। আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যে এই মামলা আমি করতে পারবো না। ২১ বছর পর সরকারে এসে তারপর মামলা করে সেই বিচার করি।

শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করি এবং কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। তারা অন্তত আমাকে তাদের এই সেবা করার যেমন সুযোগ দিয়েছে আর এই অন্যায় অবিচারের বিচার করার সুযোগ আমরা পেয়েছি।

শহীদ শেখ কামাল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষের মাঝে এই যে বহুমুখী প্রতিভা এটা সত্যিই বিরল ছিল… আজ কামাল যদি বেঁচে থাকতো এ সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো। কারণ তার যে বহুমুখী প্রতিভাটা সেই প্রতিভা বিকশিত হয়ে দেশের সব অঙ্গনে অবদান রাখতে পারতো এবং সে সেই চিহ্ন রেখেও গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কামাল আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট। কিন্তু তার জ্ঞান-বুদ্ধি সবকিছুতে একটা পরিণতিবোধ ছিল। তার মেধা ছিল বহুমুখী। একদিকে যেমন ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক জগতেও তার বহুমুখী প্রতিভা ছিল। শেখ কামাল স্পন্দন শিল্পগোষ্ঠী তৈরি করেছে। ঢাকা থিয়েটার যখন হয় সেখানেও তার অবদান ছিল। সে নিজে অভিনয় করতো, গান গাইতো। সেতার বাজাতো।

আবাহনী গড়ে তোলার পেছনের কামলের অনেক আবেগ ছিল এবং পরেও এ আবাহনীকে আরও শক্তিশালী করে। তার কথা স্মরণ করে প্রথামন্ত্রী বলেন, কামালের বিয়ের পরে ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই আমি আর শেখ রেহানা বাংলাদেশ থেকে জার্মানির উদ্দেশে রওয়ানা হই। কামালকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমাদের জন্য কী নিয়ে আসবো। সে তার খেলোয়াড়দের জন্য অ্যাডিডাস বুট নিয়ে আসতে বলেছিল।

তিনি বলেন, ৬ দফার পর থেকে যেভাবে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল বিশেষ করে আন্দোলন সংগ্রাম এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ায় হয় তারপর থেকে প্রতিটি সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা কামালের অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে কামাল মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, যে মাসে আমি আমার পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি সে মাসের যথাক্রমে ৫ ও ৮ আগস্ট আমার মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও শেখ কামালের জন্মদিন।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ কামালের বন্ধুরা তার জীবন ও কর্ম নিয়ে তাদের স্মৃতিচারণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.