প্রশান্তি ডেক্স ॥ প্রদীপের নিচেই ছিলো অন্ধকার। কথিত বন্দুকযুদ্ধকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, টেকনাফ থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তার সময়ে, টেকনাফে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে, অন্তত ৮০ জন। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, বাড়িঘর, দোকানপাট জালিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন প্রকাশ্যে। ক্রসফায়ার কেন দরকার, সমাজের গণ্যমান্যদের সে বিষয়ে জ্ঞানও দিতেন প্রদীপ।
আইনের লোক হয়েও সন্দেহভাজনদের বাড়িঘর, যানবাহন জালিয়ে দেয়ার এমন বেআইনি হুমকিদাতা টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ১৯৯৫ সালে পুলিশে যোগ দেয়ার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলেই বিভ্ন্নি জেলায় চাকরি করেছেন ২৫ বছর। সবশেষ টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর।
মাদক কারবারিদের উৎখাতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সরব ছিলেন প্রদীপ দাশ। এ ক্ষেত্রে কথিত বন্দুকযুদ্ধই ছিলো তার ভরসা। তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের পয়লা আগস্ট থেকে চলতি মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত শুধু টেকনাফ পুলিশের সাথেই ৪৮টি কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন ৮৭ জন। যার বেশিরভাগই প্রদীপ ওসি থাকার সময়ে। এমনকি গতবছরের আগস্টে এক সভায় তিনি ব্যাখ্যাও করেন ক্রসফায়ারের প্রয়োজনীয়তা কেন।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ পদক বা বিপিএম পাবার আবেদনে যে সব অর্জনের কথা উল্লেখ করেন তিনি, তাতে বন্দুকযুদ্ধই ছিলো কৃতিত্বের বড় অংশ। টেকনাফে যোগদানের ৫ দিনের মাথায় ২৪ অক্টোবর অভিযুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মফিজ আলম মারা যায় পুলিশের গুলিতে, এর চার দিন পর সাবরাং এলাকায় হাসান আলী ও হোসেন কামাল মারা যায় বন্দুকযুদ্ধে। একই বছরের ৩০ নভেম্বর হাবিব নামের এক সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করার দাবি করেন প্রদীপ কুমার দাশ। পরে হাসপাতালে মারা যায় সে। কিন্তু হাবিবের স্ত্রী গণমাধ্যমে বলেন, বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়েছিলো তার স্বামীকে।
গত ৩১ জুলাই ওসি প্রদীপের গ্রীন সিগন্যাল পাবার পরই সাবেক মেজর সিনহা রাশেদকে গুলি করেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলী। তারপর গত রোববার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার হুঁশিয়ারি দিয়ে সোমবার রাতেই চুপিসারে টেকনাফ ছাড়েন।
সিনহা রাশেদের বোন ওসি প্রদীপসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার পরই মুখ খুলতে শুরু করেন টেকনাফের ভুক্তভোগীরা। চাকরি জীবনে বিতর্কিত সব কর্মকাণ্ডের জন্য ছোটখাটো শাস্তিতেই পার পেয়ে যান প্রদীপ। ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে এক শিল্পপতিকে হয়রানির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তও হয়েছিলেন। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বন্দুকযুদ্ধের কৃতিত্বের কারণে পাওয়া বাহবা, আরো ঘটনা তৈরির জন্য দায়ী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ২১মে প্রকাশ্য রাজপথে অভিযুক্ত রোহিঙ্গা ডাকাত হাকিমকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন প্রদীপ কুমার দাশ। এরপর বন্দুকযুদ্ধে তার ভাই, সহযোগীরা নিহত হলেও এখনো খোঁজ মেলেনি হাকিমের।