স্যোশাল মিডিয়ার সার্ভিস প্রোভাইডাররা অপব্যবহারের দায় এড়াতে পারে না…তথ্যমন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সার্ভিস প্রোভাইডাররা তাদের প্লাটফর্ম অপব্যবহারের দায় এড়াতে পারে না। তিনি বলেছেন, স্যোশাল মিডিয়া পৃথিবীর বাস্তবতা। মানুষ এখন স্যোশাল মিডিয়া যত ব্যবহার করে বা দেখে, অন্য মিডিয়ার ক্ষেত্রে ততো সময় ব্যয় করেনা।

তিনি বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি সময়ে সময়ে এই স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে আমাদের দেশে এবং অন্যান্য দেশেও অস্থিরতা তৈরি করা হয়। এটি ব্যবহার করে চরিত্র হনন ও নানা ধরণের মিথ্যা সংবাদও পরিবেশন করা হয়।”

কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশনের মাধ্যমে যদি এ ধরণের কাজ করা হয়, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী সেই পত্রিকা বা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ যদি দায়ী হয়, তাহলে এ ধরণের কাজের জন্য স্যোশাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ কেনো দায়ী হবে না প্রশ্ন রাখেন তথ্যমন্ত্রী ।

হাছান মাহমুদ গত বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘শেখ হাসিনা ও ঘুরে দাঁড়ানোর বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

স্যোশাল মিডিয়া সার্ভিস যারা দিচ্ছে, তাদের অবশ্যই দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের সুবিধা ব্যবহার করে যদি কেউ অনৈতিক, দেশ-সমাজ-রাষ্ট্রবিরোধী এবং চরিত্র হননকারী কাজ করে, তাহলে তো নিশ্চয়ই যিনি সার্ভিস দিচ্ছেন তার দায় থাকে। সুতরাং সেই দায় তারা এড়াতে পারেনা। আমার দেশ থেকে তারা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করবে, কর দেবে না, আবার এই সুবিধা ব্যবহার করে আমার দেশে এবং বিদেশ থেকে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করা হবে, সেজন্য তারা দায়ী থাকবে না, এটি তো হতে পারেনা।’

হাছান মাহমুদ আরো বলেন, সে কারণেই বিভিন্ন দেশে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশ এবং ভারতেও নতুন আইন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সুতরাং আমাদের দেশেও অবশ্যই এটি করতে হবে।’

আমাদের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩৮ ধারায় স্যোশাল মিডিয়ার সার্ভিস প্রোভাইডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তথ্য মন্ত্রী বলেন, মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন, চরিত্র হনন, সমাজে অস্থিরতা বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি – এই ধরণের অপরাধমূলক কাজে স্যোশাল মিডিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করা হলে সেই সার্ভিস প্রোভাইডারদের জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে আরো একটি নতুন আইন করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করছে।

ফাইল ছবি

সাংবাদিকরা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘আওয়ামী লীগ নেতারা সহিংসতা ছাড়া স্বস্তি পায় না’ এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘এটা বিএনপি নেতাদের বেলায় প্রযোজ্য, বিএনপি নেতারাই সহিংসতা ছাড়া স্বস্তি পায় না। তিনি (মির্জা ফখরুল) আসলে সম্ভবত এটাই বলতে চেয়েছিলেন, ভুল করে অন্য কথা বলেছেন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনে পেট্টলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্টল ঢেলে পুড়িয়ে, ঘুমিয়ে থাকা ট্রাক চালক, বিশ্ব-ইজতেমা ফেরত মুসল্লি এমনকি স্কুলছাত্রের ওপর পেট্টলবোমা নিক্ষেপ করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। সমসাময়িক বিশ্বে কোনো রাজনৈতিক দল রাজনীতির নামে কিম্বা নিজেদের দাবি বাস্তবায়নে এ ধরণের কাজ করেছে বলে আমার জানা নেই।’

তিনি আরো বলেন, গত সাড়ে ১১ বছর ধরে তাদের কোনো সমাবেশ হলেই, সেই সমাবেশের আড়ালে সহিংসতা করা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা পরিচালনা করা হয়। এতেই প্রমাণিত হয়, তারাই সহিংসতা ছাড়া স্বস্তি পায় না, তাই এটি বিএনপির বেলাতেই প্রযোজ্য।

তথ্যমন্ত্রী এ সময় ‘শেখ হাসিনা ও ঘুরে দাঁড়ানোর বাংলাদেশ’ গ্রন্থের সম্পাদক শামীম আহমেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বইটিতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘটা উন্নয়নের বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শুধু ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা নয়, তার জাদুকরী নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীর সামনে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে আমরা শোকের মাস অতিক্রম করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করার কারণে, তিনি সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। আজকে তার কন্যা যার শোণিতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত স্রোত প্রবাহিত, যার কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হয়, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের স্বপ্নপূরণের পথে অদ্যম গতিতে এগিয়ে চলছে।’

‘দুঃখের বিষয় দেশের এই উন্নয়ন কেউ কেউ দেখেও না দেখার ভান করে, চোখ এবং কান থাকা সত্ত্বেও অন্ধ এবং বধিরের মতো আচরণ করে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করব, তারা সেটি থেকে বেরিয়ে আসবেন এবং আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.