গৃহবধূ ঝুলন্ত লাশের ঘটনায় স্বামী সহ ৫জনকে আসামী করে হত্যা মামলা

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিশাবাড়ী গ্রামের শ্বশুরবাড়ীর নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের পরিবার। ইয়াছমিনের স্বামী ও শাশুড়ী ও দেবর সহ শ্বশুরবাড়ীর ৫ জনকে আসামী করে গত রবিবার ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিহতের পিতা আবুদল আওয়াল মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জানায় মামলার প্রধান আসামী নিহতের স্বামী সাইফুল ইসলাম যেন বিদেশে পালাতে না পারে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশকে মামলা কপি পাঠানো হয়েছে । ঘটনার পর থেকে সকল আসামীই পলাতক রয়েছে। উল্লেখ্য গত শনিবার (৩ অক্টোবর) পৌর এলাকার বিশারাবাড়ী থেকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ইয়াছমিন আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ইয়াছমিন বিশারাবাড়ী গ্রামের প্রবাসী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ও কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা থানার সীমানার পাড় গ্রামের আবদুল আউয়াল মিয়ার মেয়ে। নিহতের পরিবারের দাবী হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মামলার অভিযোগ ও নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, গত প্রায় ৮/৯ মাস আগে বিশারাবাড়ী গ্রামের নুর মুহাম্মদের ছেলে প্রবাসী সাইফুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয় কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা থানার সীমানা পাড় গ্রামের আবদুল আউয়াল মিয়ার মেয়ে ইয়াছমিনের। ছুটিতে এসে বিয়ে করলেও করোনার কারনে পুনরায় প্রবাসে যেতে পারেনি সাইফুল। বিয়ের পর থেকেই মোটা অংকের যৌতুকের জন্য বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতো ইয়াছমিনকে। ফলে ইয়াছমিনের বাবা জমি বিক্রি করে জামাইকে বিভিন্ন সময় ৭ লাখ টাকা যৌতুক দেয়। সর্বশেষ ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য ইয়াছমিনকে চাপ সৃষ্টি ও তাকে শারীরিক নির্যাতন করে। এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে সালিসও হয় একাধিকবার। ইয়াছমিনের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার টাকা দেয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ীর লোকজন তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সবশেষ শুক্রবার (২ অক্টোবর) রাতে ইয়াছমিন তার বাবাকে জানায় তাকে তার স্বামী হত্যার হুমকি দিয়েছে। হয়তো এই রাতেই তাকে মেরে ফেলা হবে বলে জানিয়ে দ্রুত তাকে উদ্ধার করার অনুরোধ জানায়। পরদিন শনিবার সকালে নিয়ে যাবেন বলে মেয়েকে প্রতিশ্রুতি দেন বাবা। কিন্তু পরদিন সকালে মেয়ে ফোন দিয়ে কথা বলতে চাইলে মেয়ের জামাই সাইফুল ফোন রিসিভ করে জানায় তাকে ফোন দেয়া যাবেনা। সকাল ১১ টায় পুলিশের নিকট মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দ্রুত কসবা থানায় এসে মেয়ের লাশ দেখতে পান। পরে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং বিকেলে নিহতের পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করেন। কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ লোকমান হোসেন জানান; এ ঘটনায় স্বামীর বাড়ীর পক্ষ থেকে ওইদিনই একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপরদিকে নিহত ইয়াছমিনের বাবা ৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওসি আরো জানান; প্রধান আসামী সাইফুল যাতে বিদেশ না যেতে পারে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে মামলার কপি পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.