ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরবর্তী কুটি ইউনিয়নের গৌরিপুর গ্রামে ৫টি হতদরিদ্র পরিবারকে প্রশাসন উচ্ছেদ করেছেন। ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদের ফলে গত দ’ুদিন যাবত নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ৩১ জন মানুষ খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। হতদরিদ্র পরিবারগুলোর আহাজারিতে ওই এলাকায় এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে গত বুধবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, স্থানীয় তবদিল হোসেন নামক এক ব্যক্তি পাশ্ববর্তী মৃত মঞ্জুর আলীর পুত্র মালু মিয়া (৯০) এর নিকট ১২ শতক ভুমি বিক্রি করে প্রায় ৫০ বছর আগে। তারপর থেকে মালু মিয়া পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করে। তৎকালীন সময়ে ৪শত টাকা পরিশোধ না করায় তবদিল হোসেন ক্রেতা মালু মিয়াকে দলিল না দিয়ে তার পুত্র সওদাগরকে মৃত্যুর পূর্বে দলিল করে দেয়। ক্রেতা মালু মিয়া দলিল না পেয়েও সেখানে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঘরবাড়ী তৈরি করে বসবাস করতে থাকে। ক্রয় করার পর থেকেই ক্রেতা মালু মিয়া বিক্রেতা তবদিল হোসেনের ছেলে সওদাগরের কাছে দলিল করে দেয়ার আবদার করে আসলেও দলিল দেয়নি সওদাগর। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এ বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য তবদিল
হোসেনের পুত্র সওদারকে অনুরোধ করলেও সে তাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে। এ বিষয়ে সালিশও হয়। গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি হাজী মো.আবদুর রাজ্জাক (৮০) ও পাশ্ববর্তী শরৎনগর গ্রামের হাজী আবদুল বারেক ভ’ইয়া (৯৫) বলেন, জায়গা বিক্রি করার সময় আমরা ছিলাম। বিক্রিত জায়গার মুল্য ৬ হাজার ৭শত টাকার মধ্যে ৪শত টাকা না দেয়ার তবদিল হোসেন মালুকে জমি দলিল করে দেয়নি। মালু মিয়াকে এই জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে ২০০০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দেওয়ানী আদালতে একটি উচ্ছেদ মামলা দায়ের করে মৃত তবদিল হোসেনের পুত্র সওদাগর মিয়া। সেই মামলায় বিজ্ঞ আদালত এই ভিটি থেকে মালু মিয়ার পরিবারকে উচ্ছেদ্রে নির্দেশনা প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক গত মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ’মি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাছিবা খান উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এ ঘটনায় ৭ গ্রামের লোকজন ভূমিদস্যু সওদাগরের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাছিবা খান জানান, বিষয়টি দুঃখজনক হলেও কিছু করার নেই। বিজ্ঞ আদালতের আদেশ তাঁকে তামিল করতে হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব আইয়ুব আলী ভূইয়া বলেন; এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাদের নিযুক্ত আইনজীবি এডভোকেট বিল্লাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান; নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সওদাগর তা গোপন রেখেছে। এ বিষয়ে প্রত্যয়ন পত্র দেয়া হবে। এ বিষয়ে উচ্ছেদ মামলার বাদী সওদাগর মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।