ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় নিমবাড়ী গ্রামে গোষ্ঠিগত দ্বন্দ্বের জেরে আবারো রাতের আধারে কাবিলা গোষ্ঠির নেতা জামশেদ সর্দারের বাড়িতে লুটপাট ও ভাংচুর চালিয়েছে পান্ডুর গোষ্ঠির লোকজন। গত সোমবার ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত ৬টি ঘরের মালামালসহ দরজা জানালাও নিয়ে গেছে লুট করে। জামশেদের বাড়ি থেকে মাত্র ৩শ গজ দুরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও পুলিশ ছিলো নির্বিকার। কয়েকদিন ধরে এই লুটপাট ও ভাংচুরের দৃশ্য যে কোনো বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে এলাকার মানুষের অভিমত। এ ঘটনায় পরিবারটির প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। ইতোপূর্বে ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় কাবিলা গোষ্ঠি ও তাদের সমর্থকদের আরো প্রায় ৫০টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছিলো। গত সোমবার ২২ মার্চ ভোররাতে জামশেদের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট নিয়ে পান্ডুর গোষ্ঠির ৩৮ জনকে আসামী করে মামলা করেন জামসেদ সর্দারের স্ত্রী মোছাঃ জমিলা খাতুন। ওই রাতেই পুলিশ লুটতরাজের মামলার আসামী সুদন মিয়ার ছেলে রুস্তুম মিয়া, মস্তু মিয়ার ছেলে শামিম ও রতন মিয়ার ছেলে শরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। অপরদিকে রহিজ ও ফায়েজ হত্যা মামলার আসামী আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ্এর আগে গত ১৮ মার্চ ফায়েজ হত্যার আসামী ইমন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাবিলা গোষ্ঠির নেতা জামশেদ সর্দারের বাড়িতে তার ৩ ছেলের মোট ৬টি পাকা ঘর হেমার দিয়ে ভাংচুর করে ঘরের সকল মালামাল এমনকি দরজা জানালা এবং গ্রীলগুলোও নিয়ে গেছে। জামশেদ সর্দারের স্ত্রী জমিলা খাতুন (৬৫) বুক ফাঁটা রোদন করে বলেন; গত সোমবার (২২ মার্চ) ভোররাত ৩টা থেকে ৪০/৪৫ জন মানুষ আমার ঘরসহ আমার ছেলে ইয়াছিন এবং মনিরের ঘরের দরজা জানালা হেমার দিয়ে ভেংগে ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিটি ঘরের আলমিরা, খাট, ফ্রিজ, টেলিভিশন, পানির মোটর, স্বর্ণালংকার ও নগদ ৭০ হাজার টাকাসহ সমস্ত মালামাল লূট করে নিয়ে যায়। জামশেদ সর্দারের মেয়ে আঁখি (২৫) স্বামীর বাড়ী কসবা উপজেলার জাজিসার গ্রাম থেকে খবর পেয়ে ভোর ৬ টায় গিয়ে দেখেন মস্তু মিয়ার পুত্র লালচাঁন, সেলু মিয়া, সুদন মিয়ার ছেলে মস্তু মিয়া, শিবা, রতন, আজগর, ইকরাম বাড়ির মালামাল ভ্যানগাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা পুলিশকে ফোন দিলেও তারা ফোন ধরেননি। অথচ এক বাড়ীর পরেই পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিলো। জমিলা খাতুন আরো বলেন; আমি বুড়া মানুষ অনুরোধ করি আমার জিনিসপত্র যেন না ভাংগে। এ কথা বলায় রাগে ক্ষোভে আমাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। আমার আলমীরা থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।বাড়ির ৩টি ফ্রিজ নিয়ে যায় এবং আমার ঘরের ফ্রিজটি ভেংগে ফেলে ওরা। আমার ছেলের বউদের ৫টি দামি মোবাইল, ৩টি টিউবওয়েল, ৩টি পানি উঠানোর মোটরসহ ১৫টি গরু নিয়ে যায়। বাড়ীর আশপাশের মহিলারা এই বর্বরোচিত লুটপাট দেখে হতবাক হয়ে যায়। মান্দারপুর গ্রামের কিরন নেছা বেগম (৭০) বলেন; ১৯৭১ সালের মতো ঘটনা মনে হইলো। হাতুরাবাড়ী গ্রামের পারুল বেগম (৬৫) বলেন; গ্রামে পুলিশের ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ভাবাই যায়না। দেশে কি আইনকানুন আছে ? ওই গ্রামে কর্তব্যরত কসবা থানা উপপরিদর্শক আবদুর রাজ্জাকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভীষন ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, এখন কোনো কথার উত্তর দেয়া যাবেনা। কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর ভূইয়া জানালেন; নিমবাড়ীতে ফায়েজ হত্যার ঘটনার পর থেকে নিহতের সর্মর্থকরা প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরে লুটপাট ও ভাংচুরের অভিযোগে মামলা গ্রহন করা হয়েছে। ওই মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি হত্যা মামলার আশরাফ নামে আরো একজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উল্লেখ্য গত ১৩ মার্চ উপজেলার নিমবাড়ী গ্রামে গোষ্ঠিগত দ্বন্দ্বে আতর্কিত হামলায় খুন হয় লাবু মিয়ার পুত্র ফায়েজ মিয়া (৬০)। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পান্ডুর গোষ্ঠির লোকজন প্রতিপক্ষ কাবিলা গোষ্ঠির লোকজনের বাড়িতে একের পর এক লুটতরাজ ও ভাংচুর চালিয়ে যাচ্ছে।